top of page

নাঙ্গলকোট উপজেলার ইতিহাস ঐতিহ্য

কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট, একটি উপজেলার নামই শুধু নয়,

বীরত্বে গাঁথা বহু আন্দোলন সংগ্রামের নাম নাঙলকোট।

ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এক জনপদের

নাম নাঙ্গলকোট । কবির কবিতা আর শিল্পীর

তুলির আঁচঢ়ে নাঙ্গলকোটের ছবি আকাঁ হয়েছে।

খৃষ্টীয় অষ্টম শতকে আরাকান রাজসভার

কবি মুকন্দরামের কাব্যে হোমনাবাদ পরগনার মানুষের

জীবন চিত্রের পরিচয় মেলে। পূর্ব বাংলার

ইতিহাসে সমতট অঞ্চলের কাহিনীর

অধিকাংশ পাতা জুড়ে এ এলাকার তথ্য

স্থান পেয়েছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি আন্দোলন

সংগ্রামে নাঙ্গলকোট বরাবরই ছিল প্রথম।

দায়েমছাতি, ময়ূরা, শ্রীহাস্য, ধাতিশ্বর আজো ঐতিহ্য

হারায়নি। স্মৃতি জাগানিয়া মাঝিপাড়ার

মাঝিদের পালতোলা নৌকার বন্দর

নাওগোদা, চিলপাড়া, জাপানন্দী,

বাঙ্গড্ডা যেন জীবন্ত রুপকথার সমাহার।

সম্রাট আকবরের মন্ত্রী সভার প্রভাবশালী সদস্য রায়বাবুর নামে নাঙ্গলকোটে একটি ইউনিয়নের

নাম করন করা হয় "রায়কোট"। শিক্ষিত স্বজ্জন

লোকদের বসবাস স্থল হিসেবে বৃটিশরা অনেক

কোটপরা মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করেই এখানকার নাম

করনে উৎসাহী হন। তাছাড়া জলদস্যূদের

আক্রমণ প্রতিহত করতে নবাব আলীবর্দী খাঁর

তৈরী কৃত দূর্গ"কোর্ট" নামকরনে ইস্পিত ভূমিকা রাখে।

ব্যবসা ও কৃষি এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান পেশা হওয়া সত্বেও পোশাকে রীতিমত আভিজাত্যের

ছোঁয়া দেখে অনেক বৃটিশেরই নজর

কাড়তে সক্ষম হয়েছিল। বৃটিশ

বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী

শ্রী বসন্ত কুমারের ৩২ সহযোগীসহ আত্মদানের

স্মৃতি কাহিনী এখনো এ অঞ্চলের মানুষের

মুখে মুখে। নাঙ্গলকোটের মানুষের দুঃখ

কষ্ট আর বঞ্চনার ইতিহাস শুধু

নাঙ্গলকোটে চাপা থাকেনি অল্পেতুষ্ট

এখানকার মানুষের কল্পকথা, না পাওয়ার

ব্যাথা, সব হারানোর ইতিহাস বিখ্যাত

লেখক শহীদুল্লাহ কায়সারের

ধারাবাহিক নাটক সংশপ্তকে কালজয়ী চলচিত্রকার

জহির রায়হানের "জীবন থেকে নেয়া" ছবিতে ফুটে উঠেছে।

জনপ্রিয় লেখক ইমদাদুল হক মিলন

লেখা নাটকে নাঙ্গলকোটের মানুষের

প্রত্যাহিক জীবন চিত্রের পরিচয়

তুলে ধরা হয়েছে। সোনালী আঁশের অঞ্চল

নাঙ্গলকোটের পাটোয়ার মরা নদীর

তটে পাড়লেও আজো ঐতিহ্য হারায়নি।

কিল্লা দিঘী এখনো জীবন্ত সাক্ষী। যুগে যুগে প্রতিটি আন্দোলন

সংগ্রামে নাঙ্গলকোটবাসী তাদের

বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে। নাঙ্গলকোট

বাসীর যতটুকু অর্জন তা কারো দানে নয়

পুরোটাই আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে অর্জিত হয়েছে।

কুমিল্লা বিভাগ আন্দোলনের পুরোধা এডভোকেট মোখলেছুর রহমান চৌধুরী কুমিল্লা ও নোয়াখালীর

মধ্যবর্তী স্থানে নতুন জেলা আন্দোলনের

অন্যতম সদস্য এডভোকেট গফুর মজুমদার ও রফিকুজ্জামানের

পিতৃভূমি এ নাঙ্গলকোট। আজকের বাংলাদেশের স্বনামধন্য মিডিয়া ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশ প্রতিদিন ও নিউজ-২৪ এর সিইও জনাব নঈম নিজামের জন্মস্থান এ নাঙলকোটেই। বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি জনাব সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং বিচারপতি জনাব ডঃ মোঃ জাকির হোসেনের বাড়ি নাঙ্গলকোটে। বাংলাদেশের এটর্নী জেনারেল অফিসে প্রথম সহকারী এটর্নী জেনারেল হিসাবে এডভোকেট মোঃ মজিবুর রহমান মজিবের বাড়ি নাঙ্গলকোট উপজেলায়।

দ্বিজাতি তত্ব আন্দোলন ও "৪৭" এ দেশ ভাগ আন্দোলনে এখানকার মানুষের ভুমিকায়

মুগ্ধ হয়ে পরবর্তীতে পাকিস্তানের লৌহ মানব

নাঙ্গলকোট সফরে আসেন। এছাড়াও বাংলার

গর্ব এ,কে ফজলূল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান

ভাসানী এখানে এসে নাঙ্গলকোটের মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হন। ৬৯'র গন অভ্যুথানের সুতিকাগার ছিল

নাঙ্গলকোট। শ্রীহাস্য গ্রামের একটি তুচ্ছ

ঘটনার মধ্যে দিয়ে পাকিস্তানীদের তাড়ানোর সাহস পায় বীর বাঙ্গালী। সূত্রপাত ঘটে স্বাধীনতা সংগ্রামের। এ ঘটনায়

১৩ ই,পি,আর সদস্যের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু মধ্যদিয়ে

পাকিস্থান বিরোধী মনোভাবের প্রথম

প্রকাশ ঘটে নাঙ্গলকোটের ধাতীশ্বরে।

বিবিসির তৎকালীন ভাষ্যকার মার্কটালী এ

ঘটনার বর্ণনায় স্বাধীনতা প্রিয় বাঙ্গালীদের আশ্বস্থ করে তোলে। বিশ্ব দরবারে নাঙ্গলকোট বীরত্বের পরিচয়ের

পাশাপাশি স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা ভূমির মর্যাদা লাভ করে। প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শুধু

৪টি গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি উপরন্ত তারা এখানকার ৩২ হাজার মানুষের জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছিল। তাদের অত্যাচারে নাঙ্গলকোটের

প্রায় চার শতাধিক মানুষ চির পঙ্গুত্বের শিকার হয়।

যে স্মৃতি এ অঞ্চলের মানুষকে আজো কাঁদায়

সহানুভুতি জানাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর

রহমান নাঙ্গলকোটের শ্রীহাস্য ও ধাতীশ্বর আসার

ঘোষনা দেন। এর পূর্বে তোফায়েল আহমেদ,

আব্দুল কুদ্দুস মাখন, তাহের উদ্দিন ঠাকুর,

আসম আব্দুর রব, অধ্যাপক খোরশেদ আলম।

শাজাহান সিরাজ, কে এম ওবায়দুর রহমান,

মোঃ নাসিম, আবদুল মালেক উকিল,

আলহাজ্ব জালাল আহম্মদ, আব্দুল আউয়াল, মফিজুল ইসলাম, মনিরুল হক চৌধুরী, অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদসহ দেশ বরেণ্য বহু

নেতা নাঙ্গলকোট বাসীর সাথে সাক্ষাত

করে তাদের উৎসাহ যোগান। ২৫শে মার্চ

ইয়াহিয়া খাঁন সামরিক শাসন জারি করায়

বঙ্গবন্ধু ঘোষনা দিয়েও ঘটনা স্থলে পরিদর্শনে আসতে

পারেননি। এ ঘটনায় তৎকালীন কুমিল্লার অতিরিক্ত

জেলা ও দায়রা জজ আমিনুর রহমান খান

১৭ নভেম্বর ১৯৬৯ সনে ৫ জনের ফাঁসি এবং ১৬ জনের

যাবৎজীবন রায় ঘোষনা করেন। পরবর্তীতে জেলা জজ

আদালতে আপীলেও প্রায় একই রায় বহাল থাকায় বঙ্গবন্ধু নিজ খরচে হাইকোটে আপীল করেন,

মামলাটি পরিচালনা করেন হামিদুল হক চৌধুরী ও

সিরাজুল হক। এদিকে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় মামলার

কার্যক্রম স্থগিত হয়ে পড়ে। যুদ্ধ শেষে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে এলাকার হাজার হাজার মানুষের গণ স্বাক্ষর আর টিপসই নিয়ে নিঃশর্ত মুক্তির আবেদন

করলে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত ২১ কয়েদি মুক্তি লাভ করে। দেশ স্বাধীন না হলে এ মানূষ গুলো কোন দিন আলোর

মুখ দেখার সুযোগ পেতনা। মুক্তিযুদ্ধে নাঙ্গলকোট বাসীর স্বতঃফুর্ত অংশ গ্রহণ ছিল রীতিমতো ঈর্ষনীয়।

যে নামটি না নিলে আমাদের পাপ হবে,তিনিই প্রথম স্বপ্ন দেখেছেন নাঙলকোট থানার, তাই ১৯৭৯ সনে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এক সময়ের প্রভাবশালী শ্রমিকনেতা, জনাব কাজী জাফর আহমেদ সাহেবের জামানত বাজেয়াপ্ত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে, নাঙলকোটের অবহেলিত ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে নতুন নাঙলকোট থানার জন্ম দেন তিনি নাঙলকোটের প্রাণপ্রিয় নেতা সাবেক সাংসদ জয়নাল আবেদিন ভূঁইয়া।

স্মরণ করছি, মেজর হায়দার, ক্যাপ্টেন মাহবুব, মেজর এনামুল

হক চৌধূরী, ক্যাপ্টেন হুমায়ুন কবির,(বীর প্রতিক)

কর্নেল কাদের, বিগ্রেডিয়ার জালাল উদ্দিন

সিদ্দিকী, গোলাম মাওলা মজুমদার, কমান্ডার আব্দুল মালেক, রশিদ আহম্মদ খন্দকার, আনোয়ার হোসেন মজুমদার, ইসহাক মিয়া, সুবেদার আকমত আলী, আবদুল গনি দারোগা, কমান্ডার মহসিন,আরিফ.,

★হেসাখাল ইউনিয়নের কৃতি সন্তান কুরকুটার স্বনামধন্য মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম খাঁন.এবং হেসাখালের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মোঃ কলিম উল্লাহ,

সহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার কৃতিত্বপূর্ণ অবদান

জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবেন। বাংলাদেশের

ইতিহাসে নাঙ্গলকোটের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য সন্নিবেশিত

হয়েছে। খেতাবে ভূষিত হন ৪ বীর নাঙ্গলকোটবাসী। (ক্যাপ্টেন হুমায়ূন কবির বীরপ্রতীক, আবুল কালাম বীরপ্রতীক,

শহীদ আলী অশ্রাফ বীর বিক্রম,শহীদ রঙ্গুমিয়া বীর বিক্রম।।। এছাড়া অনেক জ্ঞানী মানুষ এবং মহৎ ব্যাক্তিদের জন্মভূমি নাঙ্গলকোট কোর্ট। ভালোবাসা ও শুভ কামনা রইল প্রিয় কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট নামক উপজেলার জন্য।

এটাই পৃথিবীর বুকে আমার জন্মভূমি ও রক্ত মাংস অস্থি মজ্জায় আমার বড় হয়ে উঠা।

শত সহস্র মানুষের আদর স্নেহে শৈশব কৈশোর পেরোনো প্রতিটি ধূলিকণা মাখা আবেগ মথিত পরিমন্ডলের সবকিছুর জন্য রক্তিম ভালোবাসা।

কবি মাসুদ মজুমদার

নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা

 
 
 

Comments

Rated 0 out of 5 stars.
No ratings yet

Add a rating

+821049977355

©2023 by www.newsasiatv.com. Proudly created with Wix.com

VOICE OF ASIA BANGLA

Thanks for submitting!

bottom of page